| লেখক | : জহির রায়হান | 
| ক্যাটাগরী | : চিরায়ত উপন্যাস | 
| প্রকাশনী | : অনুপম প্রকাশনী | 
| ভাষা | : বাংলা | 
| পৃষ্ঠা | : ৯৩ পাতা | 
| মুল্য | : ০.০০৳ | 
| রেটিং | : 
                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                        (০)
                         | 
| কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই | |
 
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
            “বরফ গলা নদী” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ
উত্তরের জানালাটা ধীরে ধীরে খুলে দিলাে লিলি। একঝলক দমকা বাতাস ছুটে এসে আলিঙ্গন করলাে তাকে। শাড়ির আঁচলটা কাঁধ থেকে খসে পড়লাে হাতের উপর। নিকষ কালাে চুলগুলাে ঢেউ খেলে গেলাে। কানের দুলজোড়া দোলনের মতাে দুলে উঠলাে। নীলরঙের পর্দাটা দু-হাতে টেনে দিলাে সে। তারপর বইয়ের ছােট আলমারিটার পাশে, যেখানে পরিপাটি করে বিছানাে বিছানার ওপর দু-হাত মাথার নিচে দিয়ে মাহমুদ নীরবে শুয়ে, সেখানে এসে দাঁড়ালাে লিলি। আস্তে করে বসলাে তার পাশে। ওর দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে থেকে মাহমুদ বলল, আমি যদি মারা যেতাম তাহলে তুমি কী করতে লিলি ?
আবার সে কথা ভাবছাে? ওর কণ্ঠে ধমকের সুর। মাহমুদ আবার বলল, বলাে না, তুমি কী করতে ? কাঁদতাম। হলাে তাে ? একটু নড়েচড়ে বসলাে লিলি। হাত বাড়িয়ে মাহমুদের চোখজোড়া বন্ধ করে দিয়ে বলল, তুমি ঘুমােও। প্লিজ ঘুমােও এবার। নইলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে যে। আজ ক-রাত ঘুমােওনি সে খেয়াল আছে ?
মাহমুদ মুখের ওপর থেকে হাতখানা সরিয়ে দিলাে ওর, কী বললে, লিলি ! তুমি কাঁদতে তাই না ? না, কাঁদবাে কেন, হাসতাম। কপট রাগে মুখ কালাে করলাে লিলি। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে পাকঘরের দিকে চলে গেলাে সে। মাহমুদ নাম ধরে বারকয়েক ডাকলাে, কিন্তু কোনাে সাড়া পেলাে না। পাকঘর থেকে থালা-বাসন নাড়ার শব্দ শােনা গেলাে। বােধ হয় চুলােয় আঁচ দিতে গেছে লিলি। চোখজোড়া বন্ধ করে ঘুমােতে চেষ্টা করলাে সে। ঘুম এলাে না। বারবার সেই ভয়াবহ ছবিটা ভেসে উঠতে লাগলাে ওর স্মৃতির পর্দায়। যেন সবকিছু দেখতে পাচ্ছে সে। সবার গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে। মা ডাকছেন তাকে—মাহমুদ বাবা, বেলা হয়ে গেলাে। বাজারটা করে আন তাড়াতাড়ি।
চমকে উঠে চোখ মেলে তাকালাে সে। সমস্ত শরীর শিরশির করে কাঁপছে তার। বুকটা দুরুদুরু করছে। ভয় পেয়েছে মাহমুদ। তবু আশেপাশে একবার তাকালাে সে। মাকে যদি দেখা যায়। কিন্তু কেউ তার নজরে এলাে না। এলাে একটা আরশুলা, বইয়ের আলমারিটার ওপর নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়াচ্ছে সেটা। তার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইল মাহমুদ।
একটু পরে পাকঘর থেকে একগ্লাস গরম দুধ হাতে নিয়ে এ ঘরে এলাে লিলি। ওকে দেখতে পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হলাে মাহমুদ। একটুকাল নীরব থেকে বললাে, আমি মরলাম না কেন, বলতে পারাে লিলি ? সে কোনাে জবাব দিলাে না। বিছানার পাশে গােল টিপয়টার ওপর গ্লাসটা নামিয়ে রাখল।
মাহমুদ আবার জিজ্ঞাসা করলাে, কই আমার কথার জবাব দিলে না তাে ? লিলি বললাে, দুধটা খেয়ে নাও, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।