লেখক | : নবনীতা দেবসেন |
ক্যাটাগরী | : গল্প, শিশু কিশোর, শিশু কিশোর গল্প |
প্রকাশনী | : অঞ্জলি প্রকাশনী |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ১২৪ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
১। বিদঘুটে বাড়ির গল্প -
এই গল্পটা নবনীতা দেবসেনের ঘরে যে কুকুর বিড়াল আছে তাদের নিয়ে। হাস্যরসের ভঙ্গিতে নিজের ঘরের এসব প্রাণীর অদ্ভুত কাজকর্ম নিয়ে গল্প করেছেন। খুব ভাল লাগলো আর হাসলাম অনেজ জায়গায়।
রসকষ মিশিয়ে হাস্যকর ধাঁচের গল্প যেখানে খারাপ লাগার মতো জায়গাতেও কিঞ্চিৎ মজার ধাঁচের কথাবার্তা।
২। রুবাইয়ের বারান্দা আর বনপাহাড়ি -
কি মায়া মায়া, সুন্দর লেখার একটা গল্প!
বাচ্চা মতোন এক মেয়েকে নিয়ে এই গল্প — যে কিনা তার কল্পনার ক্যানভাসে বিভিন্নরকম গল্প তৈরী করে, খেলাধুলা করার চেয়ে যে কিনা আকাশ দেখতে ভালবাসে, পাখি দেখতে ভালবাসে। চাঁদ সূর্য নক্ষত্র এগুলো কত দূরে হলেও তাদের আলো কতো কাছে, এসব ভেবে সে অবাক হয়।
৩। কায়াক -
কৌশিকী এসেছে ভীনদেশে, মানে বেশিদিন হচ্ছে না সে আমেরিকা আসলো। কিন্তু তার ঠাকুমার জন্য মন কেমন করে, চিন্তা করে কিভাবে ঠাকুমা বৃদ্ধাশ্রমে থাকবে। তারপর আরো কিছু উপলব্ধি থেকে তার মন খারাপ হতে থাকে।
মন খারাপ করে দিলো গল্পটা। ভালো লাগলো বেশ
৪। রঞ্জনের গল্প -
পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে রঞ্জন হলো লেখাপড়াতে সবচেয়ে কাঁচা। দুইবার ফেল করে তার আর ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস সেভেনে ওঠা হলো না। এসবের পর তার বাবাকে মা বললো "এটাকে আমায় দাও, একে আমার শিক্ষাটাই শেখাই"। তারপর মায়ের হাত ধরে রঞ্জন রান্নাবান্না শিখলো খুব উৎসাহ আর আনন্দের সাথে। এরপর সে বিদেশে গেলো।
গল্পটা আহামরি না হলেও, কিছু ছোটখাটো বিষয় অনুধাবন করা যায়
৫। সবুরে মেওয়া ফলে -
হঠাৎ করে কল দেওয়া কোনো অজানা মানুষের সাথে আড্ডা হয়ে যায়, এই গল্পটা এমনই। পরে দেখা যায় যিনি কল দিয়েছে উনি মনে করতে পারছেন না কেন কল দিয়েছে বা কাকে কল দিয়েছে।
ফাওল একটা গল্প। বেশ জোর করে হাসানোর চেষ্টা করানো হয়েছে। কিন্তু হাসি পেলো না
৬। শুক্তিমতী -
মহাভারতে কোলাহল নামে এক পর্বতের উল্লেখ আছে। এই পর্বতে স্বচ্ছ নীল দীঘি ছিল এবং সেখানে অভিনব সৌন্দর্যের পন্ম। এই অম্লান পঙ্কজের মালাকে বলা হলো বৈজয়ন্তীমালা, যে মালাটি গাঁথতে সময় লাগলেও মালাটির সুগন্ধী কখনও ম্লান হয় না, মালার ফুল কখনও শুকায় না। একদিন শুক্তিমতী নামে এক পরম কিন্নরী স্বর্গ থেকে এই কোলাহল-পর্বে নেমে এলো। কোলাহল পর্বত অনেক দেবদেবীকে দেখলেও এই অপ্সরীকে দেখে মুগ্ধ মোহিত হয়ে যায় এবং কোলাহল পর্বত এক যুবকে পরিণত হয়ে শুক্তিমতীর সামনে আসলো। এই দু'জনকে নিয়ে এই ছোট গল্পটি....
লেখার হাত বেশ ভালো লাগলো। হালকা ধাঁচের সুন্দর গল্প।
৭। রূপবতীর বিয়ে -
এই গল্পটি আইরিশ উপকথার ছায়া অবলম্বনে।
রূপবতী নামক এই রাজকন্যা খুবই সুন্দরী। যেমন সুন্দরী তেমনই তার রূপের অহংকার। এই রূপের বড়াইয়ের জন্য তার বিয়ে হচ্ছিল না এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অভ্যাস ছিল তার।
এই গল্পে আমরা শিখতে পারি, রাজার মেয়ে হোক আর যে হোক, কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। আর মানুষকে ছোট করে দেখাও উচিত নয়। মানুষ হিসেবে যতো অমায়িক হবে, যতো অহংকার কম থাকবে ততই সে বড়লোক। নিজের পরিবারের টাকাপয়সার অহংকারে এবং সেই জন্যে কোনো কাজ করতে না চাইলে সে ই সবচেয়ে গরীব। কষ্ট করে কাজকর্ম করতে হবে তখনই মানুষ অমায়িক হবে, তখনই অন্যের কষ্ট বুঝতে পারবে
৮। বুদ্ধি বেচার সওদাগর -
গুজরাতী লোককথা অবলম্বনে গল্পটি
ধরুন একটা বালক বাজারে বুদ্ধি বিক্রি করা শুরু করেছে। কেউ কোনো ঝামেলা তে পড়লে তার কাছে এসে সমাধান চায়, সাথে টাকা নেয়। এমন একটা অংশও ছিল "এতো টাকার বুদ্ধি দাও তো আমাকে" এমন বলে। এমন সব কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে এই গল্পটি।
মজাদার গল্প। বাচ্চাদের শুনালে তারা বেশ মজা পাবে। হাসার মতো কিছু জায়গাও ছিল
৯। টাপুর টুপুর আর বনদেবী -
টাপুর আর তার বউ টুপুর মিলে এক বিশাল অরণ্যে কুটির বেঁধে। একদিন টুপুর বিষযুক্ত কোনো এক ঝর্ণাতে গিয়ে মারা গেলে। টাপুরের দুঃখ দেখে বন-দেবী তার কাছে এসে কথা বললো এবং তাকে এটা-সেটা করতে দিলেন...
এটিও রূপকথার গল্প। মোটামুটি ভালোই। রূপকথার গল্প যেভাবে লেখা হয় সেরকমই লেখার ধাঁচ।
১০। আলো আর আঁধার -
চাঁদের বুড়ি যে চরকা কাটে, উপহার দেয়, এমন ধরণের রূপকথা ধর্মী গল্প। তেমন ভালো লাগেনি গল্পটা।
তবে ইন্টারেস্টিং
১১। হাবু গাবু সাবু -
উপরোক্ত নামের তিন ভাই থাকতো পাঁচমিশালী নামক গ্রামে। তারা তিনজনই ছিলো বোকাসোকা ধরণের। তাদের গাঁ এর কোনো এক মোডল বললো রাজার কাছে যাওয়ার জন্য, আর তাদের বললো ভালো করে কথা বলতে। কিন্তু তারা কি ভালো কথা বলবে বুঝে না। তারপর তারা পথে যেতে যেতে ইঁদুর, ব্যাঙ ইত্যাদি অনেকের সাথে কথা বললো রাজাকে কি বলা যেতে পারে সেই বিষয়ে।
এই গল্পটা বেশ মজার লাগলো। পড়ে হাসলাম বেশ
১২। টুলুরাজকুমারী আর টুবান -
টুলুরাজকুমারী যেমন সুন্দর তেমন গুণী। কিন্তু তার বিয়ে হচ্ছে না। অনেক রাজপুত্র, মন্ত্রীপুত্র অনেকেই তাকে দেখতে আসে কিন্তু তারা কোনো এক কারণে ফিরতে পারে না, তারা যেন কোথায় হারিয়ে যায়। টুলুরাজ্যের পাশের রাজ্য ছিল বুলু রাজার এবং তার ছিল তিন ভাই। এর মধ্যে দুই ভাই ঐ রাজকুমারীকে দেখতে গিয়ে আর ফিরে আসে না। তারপর আরেক ভাই টুবান বের হলো রাজকুমারীকে বিয়ে করতে এবং দুই ভাইকে উদ্ধার করতে...
এই গল্পটি বেশ ভালো লাগলো। মজাদার রূপকথার গল্প।
**সবমিলিয়ে যদি বলি, কিছু গল্প ছাড়া আমার তেমন ভালো লাগেনি বইটি। হালকা ধাঁচের গল্প পড়ব ঠিক করছিলাম, তেমনই পেলাম গল্পগুলো এবং মজাদার গল্পগুলো।
তবে গল্পগুলো ছোটদের জন্য লেখা। তারা পড়ে বেশ মজা পাবে। অনেকগুলো গল্প রূপকথা গল্প, এসব গল্প ছোটরা পড়ে যেমন বিনোদিত হবে, তেমনি তাদেরকে গল্পগুলো শুনালে বেশ আনন্দ নিয়ে শুনবে গল্পগুলো।