| লেখক | : নিকোলাই অস্ত্রোভস্কি | 
| অনুবাদক | : রবিন্দ্র মজুমদার | 
| ক্যাটাগরী | : উপন্যাস | 
| প্রকাশনী | : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র | 
| ভাষা | : বাংলা | 
| পৃষ্ঠা | : ৪০০ পাতা | 
| মুল্য | : ০.০০৳ | 
| রেটিং | : 
                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                                                                
                                                                                        (০)
                         | 
| কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই | |
 
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
             
            "ইস্পাত" বইটির পাঠপ্রস্তুতি থেকে নেয়াঃ /bbr ১৯১৭ সালের নভেম্বরে পৃথিবীতে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল। তার প্রচলিত নাম রুশবিপ্লব। আসলে তা ছিল পৃথিবীর প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক অ্যাঙ্গেলস মেহনতি ও নির্যাতিত শ্রেণীর মুক্তির যে যুগান্তকারী পথনির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই তত্ত্বের সফল বাস্তবায়ন ঘটেছিল লেনিনের নেতৃত্বে। সােভিয়েত ইউনিয়নে। br অবশ্যই সেই বিপ্লবের পক্ষ-বিপক্ষ ছিল; অবশ্যই একদল এই ঘটনাকে মানবজাতির গৌরবােজ্জ্বল ঘটনাফলক বলে উল্লেখ করলেও অপরদল ঘটনাটিকে নিছক নৃশংসতা ভিন্ন আর কিছু বলে স্বীকার করতে নারাজ অবশ্যই এই বিপ্লবের ফলে পৃথিবীর দেশে দেশে মেহনতি ও নির্যাতিত মানুষেরা যেমন মুক্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, তেমনই তার বিরােধীরা সাম্যবাদকে অলীক বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। br তার পরেও, এটাই বাস্তবতা যে, ১৯১৭ সালের রুশবিপ্লবের পরে পৃথিবী আর আগের মতাে থাকেনি। অর্থাৎ রুশবিপ্লবের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ প্রভাব পড়েছে এর পক্ষে-বিপক্ষের সবার ওপরে তাে বটেই, এমনকি তাদের ওপরেও-যারা নিজেদের দাবি করে নিরপেক্ষ বলে। এইরকম যুগান্তকারী বিষয় নিয়ে লেখক-শিল্পীরা আলােড়িত হবেন—এটাই স্বাভাবিক। br আর রুশসাহিত্য তাে বরাবরই মহৎ সৃষ্টিতে অগ্রগামী। আলেকজান্ডার পুশকিন, লেভ তলস্তয়, আন্তন চেখভ, দস্তয়ভস্কি প্রমুখ চিরায়তের মর্যাদা লাভ করেছেন আগেই। রুশবিপ্লব পথ খুলে দিল আরাে অনেকের জন্য। কালজয়ী সাহিত্যসৃষ্টিতে এগিয়ে এলেন ম্যাক্সিম গাের্কি ও মায়াকোভস্কির মতাে লেখকরা। তাদেরই সারিতে ইস্পাত উপন্যাস নিয়ে স্থান করে নিয়েছেন নিকোলাই অস্ত্রভস্কি। br ১৯৮৬ সালেই এই উপন্যাসটি অনূদিত হয়ে গেছে ৪৮টি ভাষায়। প্রকাশিত হয়েছে ৪২টি দেশে। ১৯৩৪ সালে প্রথম প্রকাশিত ইস্পাত পরবর্তী ৫২ বছরে বিক্রি হয়েছে দেড়কোটি কপিরও বেশি। বর্তমান সময় পর্যন্ত হিশাব করলে এই সংখ্যাটি হবে অবিশ্বাস্য। মঙ্গলগ্রহে যাবার সময় সঙ্গে নিতে চাও কী কী? এই বিষয়ে সােভিয়েত তরুণদের মতামত জরিপ করা হয়েছিল। ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক তরুণ-তরুণী সঙ্গে নিতে চেয়েছিল এককপি ইস্পাত উপন্যাস। br এসব তথ্য জানলে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, কী এমন আছে এই উপন্যাসে যা এই গ্রন্থবিমুখ সময়েও কোটি কোটি পাঠককে বাধ্য করে ইস্পাতের প্রতি আকৃষ্ট হতে? কলাকৈবল্যবাদীরা দাবি করেন, ইস্পাত’ নিছকই একটি প্রপাগান্ডামূলক উপন্যাস, সে-দাবির যথার্থতা কতটুকু? নাকি এটি সত্যি সত্যিই একটি মহৎ উপন্যাস—যা লাভ করেছে ক্লাসিকত্ব বা চিরায়তের মর্যাদা? br কোন কোন গুণের কারণে একটি সাহিত্যকর্ম ক্লাসিক বা চিরায়ত হয়ে ওঠে তা অদ্যাবধি নির্ধারণ করতে পারেননি কোনাে সাহিত্যতাত্ত্বিক। ঐতিহাসিকভাবে সীমায়িত হওয়া সত্ত্বেও কেন কোনাে-কোনাে রচনাকর্ম চিরায়ত হয়ে ওঠে তার মীমাংসা টিএস এলিয়টও করতে পারেননি। দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ কেন চিরায়ত রচনা, এই নিয়ে কোনাে থই পাননি ট্রটস্কিও। একবার বলেছেন ঐতিহাসিক কারণে; পরক্ষণেই দান্তের প্রতিভা অর্থাৎ নান্দনিক দক্ষতার কথা বলেছেন; শেষে বলেছেন যে মৃত্যু যেহেতু সার্বজনীন বিষয় তাই এই কাব্যও চিরায়ত। সব সাহিত্যই কোনাে-না-কোনাে পরিমাণে যুগের ইতিহাসকে ধারণ করে। সেই যুগের ইতিহাসকে কীভাবে ও কী পরিমাণে ধারণ করলে সাহিত্য মূল্যবান হবেতার কোথাও একটা সীমা আছে। একমাত্র প্রতিভাধর শিল্পীই এই সীমাকে উপলব্ধি করতে পারেন। এ থেকে বােঝা যায়, ধ্রুপদী না-হওয়া সত্ত্বেও কোনাে সাহিত্যকর্ম যথেষ্ট মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে। br প্রপাগান্ডামূলক বলে শুদ্ধতাবাদীরা উপহাস করলেও যেমন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’র শিল্পমূল্য বিন্দুমাত্র কমে যায় না, ম্যাক্সিম গাের্কির চিরন্তন ‘মা’-এর আকুতি যেমন বিফলে যায় না; তেমনই নিকোলাই অস্ত্রভস্কির ইস্পাত’ অপাঙক্তেয় হয়ে যায় না। পাঠকহৃদয়ে যদি সংবেদনশীলতা থাকে, যদি মহৎ আদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র পক্ষপাত থাকে, সেই পাঠকদেরকে বিস্ময়করভাবে উদ্দীপিত করতে সক্ষম এই উপন্যাস। br শিল্পের একটি মহৎ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সঞ্চরণশীলতা। লেখকের অনুভূতির প্রকাশ যদি পাঠকের নিজস্ব অনুভূতিতে রূপান্তরিত হতে না পারে, তবে সেই সাহিত্যকর্মের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। সেইদিক থেকে ইস্পাত’ একটি সফল সাহিত্যকর্ম। আমরা জেনেছি নিকোলাই অস্ত্রভস্কি যখন উপন্যাসটি রচনা করেন, তখন তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অন্ধ। সেইসঙ্গে ছিল শারীরিক পঙ্গুত্ব। এইসব দুর্ভেদ্য প্রতিকূলতা জয় করে ইস্পাত উপন্যাস রচনা করাটা এককথায় সাধারণ মানুষের কাছে অসম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন লেখক। কোথায় পেয়েছিলেন তিনি এই ইস্পাতদৃঢ় মনােবল? তা পেয়েছিলেন জীবনের কাছ থেকে। পেয়েছিলেন নিজের সংগ্রামী চেতনার কাছ থেকে। যতদিন সুস্থ ছিলেন, কাজ করেছেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে সুসংহত করার লক্ষ্যে। যখন অন্ধত্ব এল, পঙ্গুত্ব এল, তখনকার বেঁচে থাকাকে অর্থবহ করার জন্যই লিখতে শুরু করেছিলেন এই উপন্যাসটি। br পরবর্তীতে জানা গেছে, ইস্পাত’ মূলত আত্মজৈবনিক উপন্যাস। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র পাভেল করচাগিন নির্মিত হয়েছে যার ছায়া অবলম্বন করে তিনি আর কেউ নন-স্বয়ং লেখক নিকোলাই অস্ত্রভস্কি। কিন্তু বেশিরভাগ আত্মজীবনীতে যা করা হয়, নিজেকে ও নিজের পছন্দের দল ও মানুষদেরকে খুব উজ্জ্বল করে আঁকা হয়, নিজেকে সমালােচনার অতীত বলে প্রতিভাত করার চেষ্টা করা হয়, এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। হয়নি বলেই ইস্পাত’ ইচ্ছাপূরণের কাহিনী না হয়ে হয়েছে একটি নিখুঁত উপন্যাস। br এই উপন্যাস পড়ে আমরা জানতে পারছি যে, বিপ্লব মানেই এক অলৌকিক উদ্ধার নয়। বিপ্লব মানেই নয় তাৎক্ষণিক মুক্তি। বিপ্লব কোনাে তাৎক্ষণিক সমৃদ্ধি এনে দেয় ধূলায় মিশে যাচ্ছে, চারপাশের বাতাস সেই নােংরা ধূলিতে পূর্ণ হয়ে উঠছে। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে সর্বত্র পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এত দ্রুতগতিতে যে, কারাে মাথা চুলকাবার সময় নেই, কপাল থেকে ঘাম মুছবার কিংবা নাক খুঁটবার সময় নেই। | br ইস্পাত উপন্যাসের পাভেলকেও আমরা দেখি সব পিছুটান উপেক্ষা করে কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়তে, এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে যেতে। দুইরকম যুদ্ধেই সে শামিল। একরকম যুদ্ধে সে অস্ত্র হাতে সরাসরি শত্রুর মুখােমুখি দাঁড়ায়, শক্র হনন করে, নিজে আহত হয়। অন্য আরেক যুদ্ধ, যেটি আরও কঠিন, সেখানে সে নিরন্তর নিজেকে ব্যস্ত রাখে যুবসমাজকে সংঘটিত করার কাজে, পার্টির মধ্যে লুকিয়ে-থাকা আমলাতন্ত্র ও সুবিধাবাদকে নির্মূল করার কাজে, সাথীদের নিরন্তর উৎসাহ যােগানাের কাজে। | কর্মী পাভেলের সবচেয়ে উজ্জ্বল রূপ চোখে পড়ে তুষারের মধ্যে তিনমাস ধরে রেললাইন পাতার কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সময়। কনকনে ঠাণ্ডা, পরনে শীত ঠেকানাের পর্যাপ্ত পােশাক নেই, পায়ে দেবার বুটজুতাে নেই, কাজ করতে হয় চালুনির ফাঁক দিয়ে জল ঝরে পড়ার মতাে বৃষ্টির মধ্যে, খাদ্য অপর্যাপ্ত, রাত্রিযাপনের উপযুক্ত ঘর নেই-মেঝেতে খড় বিছিয়ে শুতে হয়-এইরকম পরিস্থিতিতে মুখ বুজে রেলপথের কাজ করে গেছে পাভেল ও তার সঙ্গীরা। সেই পাভেল বা লেখক নিকোলাই অস্ত্রভস্কি একমাত্র তখনই লেখালেখিকে প্রধান ও একমাত্র কাজ হিশেবে গ্রহণ করেছেন, যখন অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব তাকে বাধ্য করেছে শারীরিক শ্রমবহুল কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে রচিত হল ইস্পাত। br জরা ও ব্যাধির ওপর জয়ী হল মানবিক সগ্রাম। কেমন করে মানুষ মহৎ আদর্শের জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে তার শিক্ষা পাওয়া যাবে এই বইটি থেকে। কেউ যদি ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে থাকে তাকেও শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে হবে এই নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের কাহিনী পাঠ করে। মহৎ সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য এটাই, তাৎপর্যও এটাই। তাই ইস্পাত চিরায়ত রচনা কিনা সেই প্রশ্নে না-গিয়েও বলা যায়, এটি সৎ সাহিত্য। কোনাে রচনার জন্য এই অভিধাও কম সম্মানের নয়।