Product image
Share on:
শকুন্তলা
লেখক : অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ক্যাটাগরী : উপন্যাস
প্রকাশনী : সিগনেট প্রেস
ভাষা : বাংলা
পৃষ্ঠা : ৫৭ পাতা
মুল্য : ০.০০৳
রেটিং :
(০)
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই
Free Download
Related Product
সার সংক্ষেপ লেখক পরিচিতি
বইয়ের বিবরণ

এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে ছিল বড় বড় বট, সারি সারি তাল, তমাল, পাহাড় পর্বত, আর ছিল-ছোট নদী মালিনী।

মালিনীর জল বড় স্থির-আয়নার মত। তাতে গাছের ছায়া, নীল আকাশের ছায়া, রাঙা মেঘের ছায়া-সকলি দেখা যেত। আর দেখা যেত গাছের তলায় কতকগুলি কুটিরের ছায়া। নদীর তীরে যে নিবিড় বন ছিল তাতে অনেক জীবজন্তু ছিল। কত হাঁস, কত বক, সারাদিন খালের ধারে বিরল জলে ঘুরে বেড়াত। কত ছোট-ছোট পাখি, কত টিয়াপাখির ঝাঁক গাছের ডালে-ডালে গান গাইত, কোটারে-কোটারে বাসা বাঁধত।

দলে-দলে হরিণ, ছোট-ছোট হরিণ-শিশু কুশের বনে, ধানের খেতে, কচি ঘাসের মাঠে খেলা করত। বসন্তে কোকিল গাইত, বর্ষায় ময়ূর নাচত। এই বনে তিন হাজার বছরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কণ্বদেবের আশ্রম ছিল। সেই আশ্রমে জটাধারী তপস্বী-কণ্ঠআর মা-গৌতমী ছিলেন, তাঁদের পাতার কুটির ছিল, পরনে বাকল ছিল, গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকল-পরা কতকগুলি ঋষি-কুমার।

তারা কন্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তর্ণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলের দেবতাদের অঞ্জলি দিত।

আর কি করত?

বনে-বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো-গাই ধলো-গাই

মাঠে চরাতে যেত। সবুজ মাঠ ছিল তাতে গাই-বাছুর চরে বেড়াত, বনে ছায়া চিল তাতে রাখার-ঋষিরা খেলে বেড়াত। তাদের ঘর গড়ার বালি ছিল, ময়ুর গড়বার মাটি ছিল, বেণু বাঁশের বাঁশি ছিল, বটপাতার ভেলা ছিল, আর ছিল-খেলবার সাথী বনের হরিণ, গাছের ময়ুর; আর ছিল-মা-গৌতমের মুখে দেবদানবের যুদ্ধ থা, তাত-কন্বের মুখে মধুর সামবেদ গান।

সকলি ছিল, ছিল না কেবল আঁধার ঘরের মাণিক ছোট মেয়ে-শকুন্তলা। একদিন নিশুতি রাতে অপ্সরী মেনকা তার রূপের ডালি-দুধের বাছা-শকুন্তলা মেয়েকে সেই তপোবনে ফেলে রেখে গেল। বনের পাখিরা তকে ডানায় ঢেকে বুকে নিয়ে সারা রাত বসে রইল। বনের পাখিদেরও দয়ামায়া আছে, কিন্তু সেই মেনকা পাষাণীর কি কিছু দয়া হল!

খুব ভোরবেলায় তপোবনের যত ঋষিকুমার বনে-বনে ফল ফুল কুড়তে গিয়াছিল। তারা আমলকি বনে আমলকী, হরীতকী বনে হরীতকী, ইংলী ফলের বনে ইংলী কুড়িয়ে নিলে; তারপরে ফুলের বনে পূজার ফুল তুলতে-তুলতে পাখিদের মাঝে ফুলের মতো সুন্দর শকুন্তলা মেয়েকে কুড়িয়ে পেলে। সবাই মিলে তাকে কোলে করে তাত কণ্বের কাছে নিয়ে এল। তখন সেই সঙ্গে বনের কত পাখি, কত হরিণ, সেই তপোবনে এসে বাসা বাঁধলে।

শকুন্তলা সেই তপোবনে, সেই বটের ছায়ায় পাতার কুটিরে মা-গৌতমীর কোলে-পিঠে মানুষ হতে লাগল।

তারপর শকুন্তলার যখন বয়স হল তখন তাত-কণ্ব পৃথিবী খুঁজে শকুন্তলার বর আনতে চলে গেলেন। শকুন্তলার হাতে তপোবনের ভার দিয়ে গেলেন।

শকুন্তলার আপনার মা-বাপ তাকে পর করলে, কিন্তু যারা পর ছিল তারা তার আপনার হল। তাত-কণ্ব তার আপনার, মা-গৌতমী তার আপনার, ঋষি বালকেরা তার আপনার ভাইয়ের মতো। গোয়ালের গাইবাছুর-সে-ও তার আপনার, এমন কি-লতাপাতা তারাও তার আপনার ছিল। আর ছিল-তার বড়ই আপনার দুই প্রিয়সখী অনসূয়া, পিয়ম্বদা; আর ছিল একটি মা-হারা হরিণ শিশু-বড়ই ছোট-বড়ই চঞ্চল। তিন সখীর আজকাল অনেক কাজ-ঘরের কাজ, অতিথি-সেবার কাজ, সকালে-সন্ধ্যায় গাছে জল দেবার কাজ, সহকারে মল্লিকালতার বিয়ে দেবার কাজ; আর শকুন্তলার দুই সখীর আর একটি কাজ ছিল-তারা প্রতিদিন মাধবী লতায় জল দিত আর ভাবত, কবে ওই মাধবী লতায় ফুল ফুটবে, সেই দিন সখী শকুন্তলার বর আসবে।

এ-ছাড়া আর কি কাজ ছিল? –হরিণ-শিশুর মতো নির্ভয়ে এ-বনে সে বনে খেলা করা, ভ্রমরের মতো লতা-বিতানে গুন গুন গল্প করা, নয়তো মরালীর মতো মালিনীর হিম জলে গা ভাসানো; আর প্রতিদিন সন্ধ্যার আঁধারে বনপথে বনদেবীর মতো তিন সখীতে ঘরে ফিরে আসা-এই কাজ।

একদিন দক্ষিণ বাসাতে সেই কুসুমবনে দেখতে-দেখতে প্রিয় মাধবীলতার সর্বাঙ্গ ফুলে ভরে উঠল। আজ সখীর বর আসবে বলে চঞ্চল হরিণীর মতো চঞ্চল অনসূয়া প্রিয়ম্বদা আরও চঞ্চল হয়ে উঠল।

লেখকের অন্যান্য বই
রিভিউ
রেটিং *
নাম *
রিভিউ *
ইমেইল *

মোট ০টি রেটিংস
চমৎকার
0
ভালো
0
মোটামুটি
0
চলনসই
0
নিম্নমান
0
বুক রিভিউ
কোন বুক রিভিউ নেই