লেখক | : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
ক্যাটাগরী | : ছোট গল্প |
প্রকাশনী | : দি বুকম্যান |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ১৬৯ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
”সমুদ্রের স্বাদ” বইয়ের কিছু কথা: ভাবের আবেগে গলে যেতে ব্যাকুল মধ্যবিত্তদের নিয়ে 'সমুদ্রের স্বাদের' গল্পগুলি লেখা। প্রথম বয়সে লেখা আরম্ভ করি দুটি স্পষ্ট তাগিদে, একদিকে চেনা চাষী মাঝি কুলি মজুরদের কাহিনী রচনা করার, অন্যদিকে নিজের অসংখ্য বিকারের মোহে মূৰ্চ্ছাহত মধ্যবিত্ত সমাজকে নিজের স্বরূপ চিনিয়ে দিয়ে সচেতন করার। মিথ্যার শৃঙ্গকে মনোরম করে উপভোগ করার নেশায় মর মর এই সমাজের কাতরানি গভীর ভাবে মনকে নাড়া দিয়েছিল। ভেবেছিলাম, ক্ষতে ভরা নিজের মুখখানাকে অতি সুন্দর মনে করার ভ্রান্তিটা যদি নিষ্ঠুরের মত মুখের সামনে আয়না ধরে ভেঙে দিতে পারি, সমাজ চমকে উঠে মলমের ব্যবস্থা করবে। তখন জানা ছিল না যে ওগুলি জীবনযুদ্ধের ক্ষত নয়, জরার চিহ্ন, ভাঙনের ইঙ্গিত; জানা ছিল না যে স্বাভাবিক নিয়মেই এ সমাজের মরণ আসন্ন ও অবশ্যম্ভাবী এবং তাতেই মঙ্গল—সঙ্কীর্ণ গণ্ডী ভেঙ্গে বিরাট জীবন্ত সমাজে আত্ম-বিলোপ ঘটার মধ্যেই আগামী দিনের অফুরন্ত সম্ভাবনা। জানা না থাকলেও সত্যই কি মনে প্রাণে বিশ্বাস ছিল যে নিজেকে জানতে পারলে এ সমাজ আবার নিজের গণ্ডীর মধ্যেই নতুন করে নিজেকে গড়তে পারবে—বিকার ছেঁটে ফেলে সুস্থ হয়ে উঠবে ? আজ নিজের লেখাগুলি আবার পড়ে বুঝতে পারি, সেরকম জোরালো বিশ্বাস ছিল না। আমিও যে মধ্যবিত্ত, পথ খুঁজে না পাওয়ার আতঙ্কে বিহ্বল ও উদ্ভ্রান্ত বলেই নির্মম আত্ম-সমালোচক, এর প্রমাণটাই বড় হয়ে আছে বিশ্বাসের চেয়ে।
মধ্যবিত্ত ভদ্রদের পরিণাম জানতাম না বটে, তবে পচা ভদ্রতার মিথ্যা খোলস খুলে সবাই ছোটলোক হোক এ পরিণাম যে কামনা করতাম আমার অনেক গল্পেই তা ঘোষণা করার চেষ্টা করেছি। পথ খুঁজে না পাই, পথের ইঙ্গিত জেনেছিলাম। তাই দরদ দিয়ে নির্মম আত্মসমালোচনার মূল্যে আমি আজও বিশ্বাসী । -মাণিক বন্দোপাধ্যায়