লেখক | : আর্নেস্ট হেমিংওয়ে |
অনুবাদক | : রওশন জামিল |
ক্যাটাগরী | : চিরায়ত উপন্যাস |
প্রকাশনী | : সেবা প্রকাশনী |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ১৩৯ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি প্রখ্যাত মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে কর্তৃক ১৯৫১ সালে কিউবায় অবস্থাকালীন সময়ে লিখিত এবং ১৯৫২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস। এটা তার সেরা লেখাগুলোর একটি। উপন্যাসের প্রধান কাহিনী বর্ণিত হয়েছে উপসাগরীয় স্রোতে বিশাল এক মারলিন মাছের সাথে সান্তিয়াগোর এক বৃদ্ধ জেলের সংগ্রামের কাহিনী।
.
১৯৫৩ সালে দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি সাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার এবং ১৯৫৪ সালে নোবেল লাভ করে। অনেকে বলেছেন বুড়ো জেলে সান্তিয়াগো এই গল্পের নায়ক। অনেকে বলেছেন সমুদ্রই এই গল্পের নায়ক। এই সমুদ্র সম্ভবত সকল প্রাণীর শিক্ষক। বুড়ো সান্তিয়াগো তার ছাত্র। সে সমুদ্রকে বলে দয়ালু। যেমন স্পেনের লোকেরা ভালোবেসে বলে।
.
যারা সমুদ্রকে ভালবাসে তারাই আবার গালমন্দ করে। ছোকরা-জেলে, যারা মোটর-বোট আর বয়া নিয়ে হাঙর ধরে, বাজারে হাঙর মাছের তেল বেচে দু’পয়সা কামায়- তাদের ধারণা সমুদ্রটা পুরুষ। ওরা সমুদ্রকে বলে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়তো শত্রু। কিন্তু বুড়ো মানুষেরা সমুদ্রকে নারীর সঙ্গেই তুলনা দেয়। সমুদ্র থেকে পায় সোহাগ আর সাহায্য। সমুদ্র আসলে কি। কি তার চরিত্র। সে নারী নাকি পুরুষ তা নিয়ে অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
.
গালফ স্ট্রীমের স্রোতে ছোট্ট জেলে নৌকা ভাসিয়ে একাকী মাছ ধরে বেড়ায় বুড়ো সান্তিয়াগো। ৮৪ দিন ধরে ঘুরছে সে সমু্দ্রের বুকে , কিন্তু কোন মাছ পায় নি । তার সাথে যে ছোট ছেলেটা কাজ করতো। তার বাবা মা মনে করে বুড়োটা অপয়া। তাই তাদের ছেলে কে অন্য নৌকায় পাঠিয়ে দেয়। এবং ছেলেটা ওখানে যাওয়ার ১ম সপ্তাহে বড় বড় তিনটি মাছ ধরে ফেলল। কিন্তু প্রতিদিন বুড়ো লোকটিকে খালি নৌকা নিয়ে ফিরতে হতো।
.
ছেলেটা বলতো , "সান্তিয়াগো আমি তোমার সাথে যাব।" ছেলেটি বুড়ো লোকটাকে পছন্দ করে কিন্তু তার মা বাবার জন্য পেরে উঠে না। সান্তিয়াগো বলে উঠে, "তুমি ভাগ্যবানের নৌকায় আছ, ওখানেই থাকো।" ছেলেটা তাকে আগের দিনের কথা স্মরন করায়। যে তারা ৮৭ দিন পরেও মাছ ধরেছিল। সে বুড়োকে বিয়ার খাওয়ার অফার করে। তাকে সার্ডিন দিতে চায়। এমনকি কিছু টোপও। সে তার সাথে যেতে চাইলে সান্তিয়াগো তাকে নিষেধ করে।
.
তাই সে অন্য উপায়ে বুড়োকে সাহায্য করতে চায়। বুড়ো তাকে জানায়, পর দিন সে আরো দূরে যাবে নৌকা নিয়ে।
এই উপন্যাসের সিংহভাগ জুড়ে সমুদ্র। উপন্যাসে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া বুড়ো সান্তিয়াগোর যে সংগ্রাম কাহিনীর সাথে সাথে সমুদ্রের সূক্ষ্ম বর্ণনা পাঠককে আকৃষ্ট করে দারুণভাবে।
.
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কে , সে সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হবে , যেহেতু পাঠক নিজেও মানুষ , সুতরাং স্বভাবগতভাবেই গল্পের ‘মানুষ’ চরিত্রকেই পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসে নাড়াচাড়া করবে এবং তাকেই প্রধান চরিত্র হিসেবে গন্য করবে।
.
কিন্তু যদি দেখাটা হয় অন্যভাবে? সমুদ্র ও মাছের দিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের বুড়ো সান্তিয়াগোকে পাওয়া যায় একটা খলনায়ক। উপন্যাসে দেখা যায় , সান্তিয়াগো সমুদ্রের এক বিরাট মাছকে হত্যা করে। দিনের পর দিন তাকে বড়শি বিধিয়ে রাখে। এক ভয়াবহ যন্ত্রণা পেয়েছে মাছটি।
.
প্রথমে মাছটি যখন সহজে ধরা দেয়নি, তখন বুড়ো হুংকার ছেড়ে বলেছে ‘যত বড়ই হোক, ওটাকে আমি মারবই। ওর বিরাটত্ব আর বড়াই আমি শেষ করবই।... ওকে আমি দেখাবো মানুষ কি করতে পারে আর মানুষের লেগে থাকার শক্তি কত ভয়ংকর।’
.
উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন, যে মানুষ সম্প্রদায় মনে করে তারা বাদে দুনিয়ার বাকীসব জীবজন্তু উদ্ভিদ সবই মানুষের ভোগ্য। এবং মানুষই হচ্ছে প্রাণিজগতের রাজা, এই বুড়ো তাদেরই প্রতিনিধি।
.
মাছটি নৌকায় বেধে আনার সময় সমুদ্রের হাঙরগুলো ওঠে আসতে থাকে। আর একটি হাঙর মৃত মাছটির গায়ে কামড় দিয়ে অনেকখানি খুবলে নেয়। এরপর বুড়ো আর মাছটির দিকে তাকায় না। ভাবতেই পারে না মাছটির অঙ্গহানি হয়েছে। তবে মাছটিকে কেউ খাচ্ছে তার জন্য যে খারাপ লাগছে তা নয়, তার খারাপ লাগছে এই জন্য যে , এতে সে দাম কম পাবে।
.
যদি ঠিক একই ব্যাপার ঘটতো মানুষের সাথে? মানুষ যদি কোনো মানুষকে হত্যা করে এইভাবে তার বাহনের সাথে বেধে নিয়ে যেত তাহলে দৃশ্যটি কেমন দেখাতো?
.
মাছেদের ভেতর কোনো কবি থাকলে হয়ত তারাও এই কাহিনি লিখত এইভাবে যে , মানুষের এক প্রতিনিধি একবার আমাদের এক বিরাট মাছকে হত্যা করে তার বাহনের সাথে নিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সমুদ্রের অন্যান্য সৈনিকেরা সেটা হতে দেয় নি।
.
তারা মাছটাকে আস্ত নিয়ে যেতে দেয় নি। সমুদ্রের হাতে শেষ পর্যন্ত মানুষের প্রতিনিধি বুড়ো সান্তিয়াগোর পরাজয় হয়েছিল।