সমরেশ বসুর স্বল্প পরিসরে রচিত একটি উপন্যাস 'তরাই'।উপন্যাসটির অধিকাংশই একটি যাত্রাপথের কাহিনী।প্রথম প্রথম মনে হয়েছে কাহিনী প্রেমের দিকে আগাচ্ছে,তারপরে মনে হল প্রেমও খানিকটা, রোমাঞ্চও খানিকটা, তবে শেষে গিয়ে কিছুটা রহস্যের স্বাদও পেলাম।উপন্যাসটির ভাষ্য অনেক সাবলীল,তরতর করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই পড়ে ফেলা যায়।বর্ণনার অত্যুক্তি নেই বললেই চলে,তবে হাস্যরস রয়েছে সারা উপন্যাস জুড়েই।সময় অতিবাহিত করার জন্য বেশ ভাল একটি উপন্যাস।তবে আরেকটু বৈচিত্র্য আনলে বোধ হয় আরেকটু জমতো।
উপন্যাসের পটভূমি শুরু হয় হাওড়া রেলস্টেশনে।প্রধান চরিত্র উদিত।সে কলকাতায় এসেছিল চাকরির খোঁজে, কিন্তু হল না।তাই তার বাড়ি জলপাইগুড়ি ফিরে যাবে ট্রেনে করে। অনেকটা অযাচিতভাবেই রেলস্টেশনের সামনে দেখা হয়ে যায় একটি মেয়ের সঙ্গে। বড়লোক পরিবারের মেমসাহেবী ঢাঁট উদিতের চোখে লাগে।তারপর মেয়েটা কোনো এক ট্রেনের বগিতে ঢুকে যায়।উদিত একটা সেকেন্ড ক্লাস কম্পার্টমেন্টে ঢুকে পড়ে জায়গার খোঁজে। সেখানে নাটকীয়ভাবে দেখা হয়ে তার বাবার বন্ধু রায় মশাইয়ের পরিবারের সাথে।রায় মশাইয়ের দুই মেয়ের সাথে হাস্যকৌতুকে জমে ওঠে পুরো যাত্রা।কিন্তু আবহাওয়া তখন বেগতিক।উত্তরাঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে তুমুল বন্যার উৎপাত।স্টেশন ডুবে যাচ্ছেতাই কান্ড।তাই নেমে যেতে হল আগে ভাগেই।সেখানেই উদিতের দেখা হয় হাওড়া স্টেশনের মেয়েটার সাথে।এই প্রতিকূল আবহওয়ায় আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য মেয়েটি সাহায্য চেয়ে বসল উদিতের।তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা সুবিধার না।অন্ধকার হয়ে এসেছে।তবে সেখানে কাকতালীয় ভাবে হাজির হয়ে যায় উদিতের বন্ধু নারায়ণ তার ট্রাক নিয়ে।ট্রাকে করে তিনজন মিলে যাত্রার কাহিনী 'তরাই'।তবে রহস্যময়ী মেয়েটার জন্যই ঘটে যেতে লাগল কয়েকটা ঘটনা।শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কি দাঁড়ায়,তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে কিনা সেটা জানার জন্যই বইটা পড়তে হবে।
বই হিসেবে অত্যন্ত সুখপাঠ্য, কিন্তু শেষটা মনঃপূত হল না।