আবদুল মান্নান তালিব

আব্দুল মান্নান তালিব কবি, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, অনুবাদক, সম্পাদক, সংগঠক, সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও চিন্তার জগতে রেখে গেছেন অসাধারণ অবদান। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সনের ১৫ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার অর্জুনপুর গ্রামে। পড়াশোনা, জানাশোনার প্রতি ছিল তাঁর অদম্য আগ্রহ। আরবি, উর্দু, ফারসি ভাষায় ছিল যথেষ্ট দক্ষতা। ১৯৫১-৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর তিনি কাব্য-চর্চায় সক্রিয় ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মননশীল রচনা, গদ্যানুবাদ, গবেষণা ও শিশু-কিশোর সাহিত্য-চর্চায় অধিক মনোনিবেশ করেন। অর্ধ-শতাব্দীর অধিক কালব্যাপী তিনি সাংবাদিকতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৭ সনে লাহোরে উর্দু দৈনিক ‘রোজনামা তাসনীম'-এ সাব এডিটর হিসেবে তাঁর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ১৯৫৯ সনে লাহোর থেকে ঢাকায় এসে তিনি দৈনিক ‘ইত্তেহাদ' পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬০ সনে সাপ্তাহিক ‘জাহানে নও' পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬২ সনে ‘জাহানে নও'-এর সম্পাদনার দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭০ এর জানুয়ারীতে দৈনিক সংগ্রাম আত্মপ্রকাশ করলে সেখানে ‘শাহীন শিবির' নামে শিশু-কিশোর পাতার সম্পাদনার দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৩ সনে কলকাতায় ‘সাপ্তাহিক মীযান' প্রকাশে সহায়তা করেন এবং ১৯৭৪ পর্যন্ত এর প্রকাশনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সনে ত্রৈমাসিক ও পরবর্তীতে মাসিক কলম এবং ১৯৮১ সনে মাসিক পৃথিবী পুনঃপ্রকাশের পর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সনে ত্রৈমাসিক ও পরবর্তীতে মাসিক কলম এবং একই সাথে ১৯৮১ সনে মাসিক পৃথিবী পুনঃপ্রকাশের পর এর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৭ সনে দৈনিক সংগ্রাম পুনঃপ্রকাশের পর এর শিশুকিশোর পাতার সম্পাদনার সাথে সাথে পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগেও যোগ দেন। ফিচার বিভাগে ‘ইতিহাস ঐতিহ্য' পাতার দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা সাহিত্য পরিষদের পরিচালক হিসাবে পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক ‘বাংলা সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা'য় তিনি আজীবন সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া, তিনি ইসলামিক ল' রিচার্স সেন্টার ও লিগ্যাল এইডের মুখপত্র ‘ইসলামী আইন ও বিচার' পত্রিকার আজীবন সম্পাদক ছিলেন। সাহিত্য ও সামাজিক চিন্তার ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিক গবেষণা-প্রসূত লেখা বিদগ্ধ, মননশীল পাঠককে যথার্থই অভিভূত করে। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলিকে মোট চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১. মৌলিক রচনা, ২. অনুবাদ, ৩. সম্পাদনা ও ৪. শিশু সাহিত্য। তাঁর এযাবৎ প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থগুলি যথাক্রমে- ১. অবরুদ্ধ জীবনের কথা (১৯৬২), ২. মুসলমানের প্রথম কাজ (১৯৭৫), ৩. বাংলাদেশে ইসলাম (১৯৭৯), ৪. ইসলামী সাহিত্যঃ মুল্যবোধ ও উপাদান (১৯৮৪), ৫. আমল ও আখলাক (১৯৮৬), ৬. ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সংগ্রামী জীবন (১৯৮৭), ৭. ইসলামী আন্দোলন ও চিন্তার বিকাশ (১৯৮৮), ৮. সাহিত্য সংস্কৃতি ভাষাঃ ঐতিহ্যিক প্রেক্ষাপট (১৯৯১), ৯. ইসলামী জীবন ও চিন্তার পুনর্গঠন (১৯৯৪), ১০. সত্যের তরবারি ঝলসায় (২০০০), ১১. আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম (২০০১)। এছাড়া, ‘আল-কুরআনে সাহিত্যের উপাদান' বিষয়ক তাঁর একটি মূল্যবান গ্রন্থ পান্ডুলিপি আকারে বিদ্যমান। এ পর্যন্ত তাঁর অনুদিত যে সব গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, তার একটি তালিকা নিম্নরূপঃ অনুবাদ সাহিত্যঃ ১. খতমে নুবুওয়াত (১৯৬২), ২. ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোণ (১৯৬৪), ৩. ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন (১৯৬৫), ৪. ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন বীমা (১৯৬৬), ৫. পয়গামে মোহাম্মদী (১৯৬৭), ৬. ইসলামের সমাজ দর্শন (১৯৬৭), ৭. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি (১৯৬৮), ৮. চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান (১৯৬৮), ৯. ভাষাভিত্তিক জাহেলিয়াতের পরিণাম (১৯৭৫), ১০. ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী (১৯৭৫), ১১. আত্মশুদ্ধির ইসলামী পদ্ধতি (১৯৭৬), ১২. আত্মশুদ্ধি কিভাবে? (১৯৭৬), ১৩. কুরবানীর শিক্ষা (১৯৭৬), ১৪. মহররমের শিক্ষা (১৯৭৭), ১৫. সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং, (১৯৭৯), ১৬. সীরাতে সারওয়ারে আলম, ১ম খন্ড (১৯৮১), ১৭. মুসলিম নারীর নিকট ইসলামের দাবি (১৯৮২), ১৮. ইরান বিপ্লবঃ একটি পর্যালোচনা (১৯৮২), ১৯. সহীহ আল বুখারী, ৪র্থ খন্ড (১৯৮২), ২০. রিয়াদুস সালেহীন, ২য় খন্ড (১৯৮৬), ২১. রিয়াদুস সালেহীন, ৩য় খন্ড (১৯৮৬). ২২. রিয়াদুস সালেহীন, ৪র্থ খন্ড (১৯৮৭), ২৩. তাফহীমুল কুরআন, ১ম খন্ড (১৯৮৯) ২৪. রাসায়েল ও মাসায়েল, ২য় খন্ড (১৯৯১), ২৫. তাফহীমুল কুরআন, ১৯ খন্ড (১৯৯১), ২৬. রাসায়েল ও মাসায়েল, ৩য় খন্ড (১৯৯১), ২৭. তাফহীমুল কুরআন, ২য় খন্ড (১৯৯৩), ২৮. যরবে কালীম (১৯৯৪), ২৯. রসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা, ৩য় খন্ড (১৯৯৪), ৩০. তাফহীমুল কুরআন ৩য় খন্ড (১৯৯৪), ৩১. তাফহীমুল কুরআন, ৪র্থ খন্ড, ৩২. তাফহীমুল কুরআন ৫ম খন্ড, ৩৩. তাফহীমুল কুরআন ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৪. তাফহীমুল কুরআন ৭ম খন্ড, ৩৫. তাফহীমুল কুরআন ৮ম খন্ড, ৩৬. তাফহীমুল কুরআন, ৯ম খন্ড, ৩৭. তাফহীমুল কুরআন, ১০তম খন্ড, ৩৮. তাফহীমুল কুরআন, ১১তম খন্ড, ৩৯. তাফহীমুল কুরআন, ১২তম খন্ড, ৪০. তাফহীমুল কুরআন, ১৩তম খন্ড, ৪১.ভারত যখন ভাঙলো (২০০২), ৪২. প্রত্যয়ের সূর্যোদয় (২০০০), ৪৩. অপরাজিত (২০০৩) প্রভৃতি। আব্দুল মান্নান তলিব যেসব গ্রন্থের আংশিক অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন, সেসব মূল্যবান গ্রন্থের একটি তালিকাঃ ১. আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা (১৯৬৯), ২. সত্য সমুজ্জ্বল (১৯৮১), ৩. সহীহ্ আল বুখারী, ১ম খন্ড (১৯৮২), ৪. রিয়াদুস সালেহীন, ১ম খন্ড (১৯৮৫), ৫. নির্বাচিত গল্প (১৯৮৫), ৬. মুসলিম শরীফের মুকদ্দমা (১৯৮৬), ৭.রসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা, ১ম খন্ড (১৯৯৫), ৮.সহীহ আল বুখারী ২য় খন্ড (১৯৯৬), ৯. সহীহ্ আল বোখারী ৩য় খন্ড (১৯৯৬) ১০. রসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা ১ম খন্ড, ২য় খন্ড (১৯৯৫) ও ৪র্থ খন্ড (২০০৪)। আব্দুল মান্নান তালিব শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। এগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠ্যতালিকাভুক্ত। শিশুদের আগ্রহ, মনোস্তত্ত্ব ও আদর্শ চরিত্র গঠনমূলক বিভিন্ন গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। তাঁর রচিত এসব গ্রন্থের একটি তালিকা নিম্নরূপঃ ১. আমাদের প্রিয় নবী (১৯৭৫), ২. এসো জীবন গড়ি, ১ম ভাগ (১৯৭৫), ৩. ইসলাম শিক্ষা, ১ম ভাগ (১৯৭৬), ৪. ইসলাম শিক্ষা, ২য় ভাগ (১৯৭৬), ৫. এসো জীবন গড়ি, ২য় ভাগ (১৯৭৬), ৬. মজার গল্প (১৯৭৬), ৭. ছোটদের ইসলাম শিক্ষা, ১ম ভাগ (১৯৮০), ৮. কে রাজা? (১৯৮১), ৯.ছোটদের ইসলাম শিক্ষা, ২য় ভাগ (১৯৮১), ১০. সহজ পড়া (১৯৮২), ১১. ছোটদের ইসলাম শিক্ষা, ৩য় ভাগ (১৯৮২), ১২. আদাবু আরাবীয়া (১৯৮৪). ১৩. হাতিসেনা কুপোকাত (১৯৯০) ১৪. পড়তে পড়তে অনেক জানা (২০০০), ১৫. মা আমার মা (২০০১)। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সনে প্রতিষ্ঠিত বাংলা সাহিত্য পরিষদের পরিচালক এবং এর প্রধান প্রাণ-পুরুষ হিসাবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন আবদুল মান্নান তালিব। ২০০০ সনে আবদুল মান্নান তালিব ‘কিশোর কন্ঠ সাহিত্য পুরস্কার' লাভ করেন। ২০১০ সনে তিনি ‘বাংলা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার' লাভ করেন।

আরও পড়ুন
ক্যাটাগরী
বইয়ের ধারা
রেটিং
ভাষা
প্রকাশনী