জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (৪ মে ১৮৪৯ - ৪ মার্চ ১৯২৫) ছিলেন একজন বাঙালি নাট্যকার, সংগীতস্রষ্টা, সম্পাদক ও চিত্রশিল্পী। স্বকীয় প্রতিভা ছাড়াও অন্যান্য প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করার বিরল ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে। তিনি তার ছোটোভাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভার বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চম পুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। রবীন্দ্রনাথ তার থেকে বারো বছরের ছোটো। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাকে উৎসাহ ও সঙ্গ দিয়ে তার প্রতিভার পূর্ণ বিকাশে সহায়তা করেন। তাদের দুই দাদা কবি ও দার্শনিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রথম ভারতীয় আইসিএস অফিসার সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ছিলেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ছোটোবোন স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন বিশিষ্ট লেখিকা ও সংগীতজ্ঞা।

ছাত্রাবস্থাতেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ থিয়েটারের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি একটি পারিবারিক নাট্যদল গঠন করে নাটক মঞ্চস্থ করতে শুরু করেন। তার জ্ঞাতিভ্রাতা গণেন্দ্রনাথ ১৮৬৫ সালে স্থাপন করেন জোড়াসাঁকো নাট্যশালা। এই নাট্যশালায় প্রথম যে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল, সেটি হল মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃষ্ণকুমারী। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই নাটকে অহল্যাদেবী নামে এক সাহসী রানির ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রথম জীবনে নাট্যাভিনয়ে সাফল্য তাকে নাট্যকার হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে।

গণেণ্দ্রনাথ হিন্দু মেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি অল্পবয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে এ কাজে যুক্ত করেন। নবগোপাল মিত্রের অনুরোধে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন। পুরো প্রক্রিয়াটি তার মনে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলে এবং তিনি দেশাত্মবোধক নাটক রচনা করতে শুরু করেন। এছাড়াও তিনি রসাত্মক নাটক রচনার রীতি চালু করেন। তিনি নাটক মঞ্চস্থ করার উদ্দেশ্যে একটি সাংস্কতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন বিদ্বাজন-সমাগম নামে ১৮৭৪ সালে। এই প্রতিষ্ঠানটি রবীন্দ্রনাথকে তার প্রথম দিকের নাটক ও নৃত্যনাট্য প্রদর্শনে সাহায্য করে। প্রতিষ্ঠার নবম বছরে তিনি হিন্দু মেলার সম্পাদক নিযুক্ত হন। পুরুবিক্রম পাঞ্জাবের সাহসী রাজা পোরাসএর জীবনী নিয়ে রচিত, যিনি বাংলা ভাষায় পুরু নামে পরিচিত। পুরু আলেক্সাণ্ডারএর মুখোমুখি হন। বেঙ্গল থিয়েটার নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন করে ১৮৭৪ সালে।

স্ত্রীশিক্ষা ও নারীমুক্তি সে যুগে অপরিকল্লপিত বিষয় ছিল। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে লোকের সমালোচনাকে উপেক্ষা করে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন: তার নিজের নিজের সংসারে পর্দাপ্রথাকে তিনি আমল দেন নি, স্ত্রীকে সকলের সম্মুখে বের করতেন, তাকে নিয়ে প্রকাশ্যে সান্ধ্যভ্রমণে বের হতেন এবং নিজের শিক্ষা ও শিল্পরুচি দিয়ে স্ত্রীকে সুশিক্ষিতা করে তুলেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীর শিক্ষার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাকে কলকাতার মাঝে অশ্বারোহণের প্রশিক্ষণ দেন, যা তার সমসাময়িক রক্ষণশীল সমাজবিরোধী।

আরও পড়ুন
ক্যাটাগরী
বইয়ের ধারা
রেটিং
ভাষা
প্রকাশনী

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বইসমুহ

কোন বই খুজে পাওয়া যায়নি
খোজা হচ্ছে...