লেখক | : কাজী আনোয়ার হোসেন |
ক্যাটাগরী | : রহস্য, গোয়েন্দা, ভৌতিক, থ্রিলার ও অ্যাডভেঞ্চার |
প্রকাশনী | : সেবা প্রকাশনী |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ৩৪১ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
গাছটার ডালে পড়ে আছে চিতাবাঘ, সম্পূর্ণ স্থির।
খানিক আগে যখন হরিণের পালটা তার দৃষ্টিসীমার ভেতর এল, আড়ষ্ট হয়ে উঠেছিল লেজ, লেজের ডগা আগুপিছু করছিল-ধীর লয়ে, নিঃশব্দে, সাবলীল একটা ছন্দে। এখন একদম কোন নড়াচড়া নেই, এমনকি নিঃশ্বাস ফেলার সময় বুকের পেশীও ফুলছে না।
ঘাস খেতে খেতে গােটা প্যান-এর ওপর ছড়িয়ে পড়েছে পালটা, আকৃতি পেয়েছে নিখুঁত আধখানা চাদ। গাছগুলােকে ঘিরে থাকা নিচু ঝােপের কাছাকাছি পৌছুল ওগুলাে, তারপর কয়েক ভাগে সামনে এগােল।।
এক কিশাের হরিণ, বাকি সবার চেয়ে এগিয়ে আছে, রাতের আকাশ চিরে ছুটে আসা পেঁচার ডাক শুনে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে থমকে দাঁড়াল। জ্বলজ্বলে তারাগুলাের দিকে উড়ে গেল পেঁচাটা। এক মুহূর্ত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কিশাের হরিণ, ফুলে উঠেছে নাকের ফুটো, দৌড় দেয়ার প্রস্তুতিতে পায়ের পেশী কাঁপছে। পেঁচার ছায়া অদৃশ্য হয়ে গেল, মাথা নামিয়ে কাটা-ঝােপের দিকে এগােল কিশাের। ঝােপের আড়ালে ঘাসগুলাে কালাহারির সূর্যকে ফাঁকি দিয়ে। বেড়ে উঠেছে, এখনও তাজা ও সবুজ, খেতে মিষ্টি আর রসাল লাগে। | এক মহর্ত পর গাছপালার ফাকে তারার আলােয় আরেকটা ছায়া দেখতে পেল সে। বিশাল একটা কালাে ছায়া, এত দ্রুতবেগে ছুটে এল যে মাথাটা ভাল করে তােলার সময়ও পেল না। কোন শব্দ হয়নি। সামান্য একটু আলােড়ন উঠল বাতাসে। হাড়, পেশী, থাবা আর দাত মিলিয়ে দুশাে পাউণ্ড, পাতার ভেতর থেকে ছুটে এসে তার ঘাড়ে পড়ল। চিতাবাঘের নখরগুলাে কিশাের হরিণের পিঠে সেঁধিয়ে গেল। চোয়াল দুটো খুঁজে নিল সরু গলা, ছিড়ে ফেলল এক কামড়ে। ইতিমধ্যে হরিণটার মেরুদণ্ড, উরুর হাড় আর ঘাড় ভেঙে চুরমার হয়ে। গেছে! | শব্দগুলাে হলাে মৃদু, ভোতা-শীতকালের শক্ত মাটিতে ধরাশায়ী হলাে হরিণ, শুকনাে শক্ত ঘাস খসখস করল, ঘাড়ের শিরা থেকে কলকল শব্দে বেরিয়ে এল রক্ত-তবে যত মৃদুই হােক, প্যান-এর সমস্ত প্রাণীকে সতর্ক করে দেয়ার। জন্যে যথেষ্ট। প্রিঙ বাক হরিণের পালটা চোখের পলকে ঘুরে গেল, তীরবেগে ছুটল ঘাসের ওপর দিয়ে। ওগুলাের সামনে রয়েছে আরেক প্রজাতির হরিণ, মাথার আকৃতি ষাঁড়ের মত, লেজের ডগায় নরম এক গােছা চুল, তারা ছুটল ছােট ছােট লাফে। কয়েকটা জেব্রা দিশেহারা হয়ে চক্কর দিতে শুরু করল।