লেখক | : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় |
ক্যাটাগরী | : গল্প |
প্রকাশনী | : দে’জ পাবলিশিং (ভারত) |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ১১৩ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
পৃথিবীতে এক ধরনের মলম আবিষ্কৃত হয়েছে , যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ছাড়িয়ে উড়ান পথে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে । নানান ধরনের উড়ান যন্ত্রে উড়ে গিয়ে মানুষ ৩৫৮৯ সালে সূর্যের শেষ দুটো গ্রহও আবিষ্কার করে ফেলেছে । অনেকে মহাকাশের দূর দিগন্তে পাড়ি দিয়ে একশো - দেড়শো বছর পরে ফিরছে । পৃথিবীতে মানুষ মৃত্যুহীন হয়ে গেছে । এই মানুষেরা গত দেড়শো বছরে পৃথিবীতে কোনো শিশুর জন্ম দেখেনি । পৃথিবী থেকে নান্দনিক সকল বিষয় উধাও হয়ে গেছে । মানুষ ঝুঁদ হয়ে আছে কেবল বিজ্ঞান নিয়ে । পাগলা গণেশ একে বাড়াবাড়ি মনে করেন । তিনি মৃত্যুঞ্জয় টনিক সেবন করে জীবনের শেষ প্রান্তকে বাঁধ দিয়ে ফেলেছেন । সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন দেখেছেন তিনি । তিনি বেঁচে থাকার দীর্ঘ ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হিমালয়ে নিপাট নির্জনতার সন্ধান করছেন । হিমালয়ও তাকে তা দিতে পারছে না । গণেশ কবিতা লিখছেন , গান গাইছেন , ছবি আঁকছেন । আর বিজ্ঞানের অবিরাম সাধনায় যারা মগ্ন তারা গণেশের এমন কাজকে অকেজো বলে অবহেলা করছে । তাই গণেশ পৃথিবীর ভারসাম্যের কথা ভাবেন । নিজের পারিবারিক জীবনও তিনি ভুলে গেছেন । বউ - ছেলেমেয়ে কারো মুখ তিনি মনে করতে পারেন না ৷ বহু বছর ধরে তারাও মহাজ্যোতিষ্কমণ্ডলে এক - একজন কৃতী বিজ্ঞানী । তারা আর আসে না । গণেশ কবিতা লিখছিলেন । লেখা পাতাগুলো তিনি বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন । একজন পুলিশ আকাশপথে ধামা থেকে নেমে এসে চিনতে পেরেছিল — গণেশবাবু তার স্যার , সায়েন্স কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ৷ পুলিশটি একখানা পাতা কুড়িয়ে নিয়ে পড়ে কিছু বুঝতে না পারলেও নিজের প্রিয় শৈশবকে ছুঁতে পেরেছিল । নতুন করে শৈশবকে অনুভব করার আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল সে । সে তার মাকে আর বউকেও এনেছিল । সেদিন একটা নান্দনিকচর্চার ছোটোখাটো আসর হয়েছিল গণেশের ডেরায় । সে তার পুলিশ বন্ধুদের আনতে শুরু করে । তারপর গণেশের ডেরায় লোক আসা বাড়তে থাকে । সপ্তাহখানেক পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব এসে গণেশের কাণ্ডটাকে বিজ্ঞানবিরুদ্ধ ঘোষণা করে জানায় পৃথিবীর লোক গান গাইছে , কবিতা লিখছে , ছবি আঁকছে । গণেশ তখন তৃপ্তির হাসি হেসে তার প্রসন্নতাকে উজাড় করে দিয়ে বলেন , ‘ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে।