Product image
Share on:
পার্থিব
লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
ক্যাটাগরী : উপন্যাস
প্রকাশনী : আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত)
ভাষা : বাংলা
পৃষ্ঠা : ১৩০৩ পাতা
মুল্য : ০.০০৳
রেটিং :
(৫.০০)
১ বার ডাউনলোড করা হয়েছে
Related Product
সার সংক্ষেপ লেখক পরিচিতি
বইয়ের বিবরণ

ঢাকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যখন বুড়িগঙ্গা দেখতে গিয়েছিলেন। দুঃখ করে বললেন, “চোখে জল এল। একেবারে মরে গেছে। এখনো হয়তো উদ্যোগ নিলে একে বাঁচানো সম্ভব। নদীর সাথে সভ্যতার সম্পর্ক। নদী সংস্কার না হলে সভ্যতা বাঁচে না”। প্রকৃতির প্রতি লেখকের এই যে মায়া, এই যে আদর তাঁর দালালিক প্রমাণ হলো পার্থিব উপন্যাসটি। যেখানে কয়েকটি চরিত্রের সমন্বয়ে পার্থিবতার আড়ালে লেখক সারা পৃথিবীকে নিজের ঘর ভাববার আবেগ তুলে ধরেছেন।

বিষ্ণুপদ, কৃষ্ণজীবন, হেমাঙ্গ, নিমাই এবং চয়ন। পার্থিব উপন্যাসের এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রের মষ্কিত্ব আলাদা হলেও হৃদপিণ্ড ছিল অভিন্ন। এই পাঁচটি পুরুষ চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে আর অনেক চরিত্র আবতর্ন করেছে পুরো উপন্যাসটি জুড়ে।
সারাজীবন দারিদ্রতা সাথে যুজতে যুজতে ক্লান্ত বিরাশী বছরের অশীতিপর বৃদ্ধ বিষ্ণুপদ জীবনের কালবেলাতে এসে মেজ ছেলে রামজীবনের অসম্পূর্ণ পাকা বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে। পেশায় ডাকাত রামজীবন অন্যায় আর দারিদ্রের শেষ সীমায় পৌছেও লড়াই করে শুধু নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে বলে। সত্যি মানুষ কত অদ্ভুত!বিষ্ণুপদর জেষ্ঠ্য ছেলে কৃষ্ণজীবন তাঁর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে পরিবারকে। অধ্যাপক এবং দার্শনিক কৃষ্ণজীবনের কলকাতার সাততলার উপরে একটি সাজানো ফ্ল্যাটে, সুন্দরী স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে সুখের পরিবার। খিদের জ্বালা পেটে নিয়ে দশ-বিশ মাইল পায়ে হেটে পাড়ি দেয়া পুরনো কৃষ্ণজীবন তবু কখনো যেন এই সফল কৃষ্ণজীবনকে ছেড়ে যায়নি। মানুষ কি চাইলেই সবকিছু বদলাতে পারে? মানুষের ক্ষমতা কতটুকু?

বিষ্ণুপদর মেয়ে বীণাপাণির স্বামী নিমাই এর একমাত্র যোগ্যতা সততা। যার মূল্য দিতে গিয়ে অভাবগ্রস্ত স্ত্রী বীণাকে যাত্রা পালায় নাম লেখাতে। লোভের স্রোতে গা ভাসিয়ে বীণা সেই স্রোতে নিমাইকেও টানতে থাকে। কিন্তু নিমাই অবিচল। সততা যেন চামড়ার মত লেপটে আছে তাঁর অস্তিত্ব। সত্যি কি সততার কোন অন্য চেহারা আছে যা মানুষের রোদে পোড়া সাধারণ চেহারার মাঝে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে? পারে সেই মানুষকে নতুন করে জীবন দিতে?পাঁচ ফিট এগার ইঞ্চির হেমাঙ্গ যেন বৈভবের মাঝে দিশেহারা। আর সেখান থেকে পালাবার একটা আলাদা আস্তানা গড়ে নেয় হেমাঙ্গ। সুন্দরবনের কাছে নি শিপুরে নদীর পাড়ে এক চিলতে ঘরে হেমাঙ্গ খুঁজে নেয় নিজের ব্যক্তিগত স্বর্গ। নদী যখন প্রমত্তা হয়ে ওঠে, গগনদেব যখন আক্রোশে নির্মাণ করে প্রলয়ংকরী ঝড়ের যখন সেই তান্ডের এক সৌন্দর্য আছে। যা মুগ্ধ করে হেমাঙ্গকে। বলে দেয় পৃথিবী কারো জ্ঞানের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। সে অসীম।

এই উপন্যাসের আপাতদৃষ্টিতে সবথেকে দুর্বল চরিত্র হয়তো চয়ন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এপিলেপটিক চয়ন অপরাজেয়। যে বার বার ভাঙ্গে কিন্তু মচকায় না একটিবারও। বিষ্ণুপদ স্ত্রী নয়নতারাকে একবার একটি কথা বলেছিল, কোথায় পালিয়ে পার পাওয়া যায় না, নিজের মাঝেই ডুব দিতে হয়। হয়তো এই পাঁচ জন চরিত্রের মাঝে সেই ডুবটা চয়ন সবথেকে ভাল দিয়েছিলো। নিজের মাঝে নিজে ডুবে থাকার শিক্ষাটা না জানলে চারপাশের সস্তা ভাবনাগুলো ছিঁড়ে খেতে শুরু করে মনকে যার সবথেকে বড় উদাহরণ বিষ্ণুপদ নিজে।

লেখকের অন্যান্য বই
রিভিউ
রেটিং *
নাম *
রিভিউ *
ইমেইল *

৫.০০

মোট ২টি রেটিংস
চমৎকার
2
ভালো
0
মোটামুটি
0
চলনসই
0
নিম্নমান
0
বুক রিভিউ
By MASUM BILLAH at 23 Jan 2024, 10:20:pm
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর পার্থিব বইটা যখন হাতে নেই এবং পড়া শুরু করি ভাবিনি বইটা পড়ে নিজেকে নতুন করে একবার আবিষ্কার করবো । বিষ্ণুপদের তিন ছেলের মধ্যে কৃষ্ণজীবন গ্রামের দরিদ্রতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন সাথে সাথে পরিবেশবিজ্ঞানী হিসাবে দেশ-বিদেশে তার নাম হয় , কিন্তু তারপরও তার সেই ছোট বিষ্ণুপুর গ্রামটি তাকে টানে । এই পৃথিবীর প্রতি তার অনেক মায়া কিন্তু পৃথিবী যে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা তিনি কাউকে বোঝাতে পারেন না তার স্ত্রীও তাকে বুঝতে পারে না। এই উপন্যাসে কৃষ্ণজীবন এর পরেই হেমাঙ্গ চরিত্র অনেক ভালো লেগেছে । শহরের যান্ত্রিক জীবনে একা থাকার ইচ্ছা এবং একঘেয়ে জীবন ভালো না লাগায় অচেনা নির্জন গ্রামে একা বসবাস এবং গ্রামের জীবনের সাথে খাপ খাওয়া, ভালোবাসার টানাপোড়েন, এইসব নিয়ে হেমাঙ্গর সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি !! সকল পাঠকদের বলতে চাই যে এই লেখক এর কোন বই যদি নাও পড়ে থাকেন তাইলে এই বইটা অবশ্যই পড়বেন,এত বড় একটা বই কিন্তু পড়ে বিন্দুমাত্র হতাশ হবেন না এইতা বলে দিতে পারি ।
By BNNRC at 23 Jan 2024, 10:23:pm
পাঠ্যবইয়ে উপন্যাস সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখেছিলাম, লেখকের জীবনদর্শন উপন্যাসের অন্যতম প্রধান একটি উপাদান, যা সমগ্র উপন্যাসকে পরিচালিত করে। আমার মতে,"পার্থিব" উপন্যাসে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মূল জীবনদর্শন ছিল পলায়নপ্রবণতা। কৃষ্ণজীবন বন্ধ করে দিতে চান সব অতিরিক্ত কলকারখানা। তার মতে, আগের কালের পৃথিবীই ছিল ভালো তখন তার উপর আঘাত হানত না মানবসমাজ। অন্যদিকে হেমাঙ্গ পালিয়ে যায় শহর থেকে, নিশিপুরে, নদীর তীরে। সে গ্রামের লোকেদের সঙ্গে মিশতে শেখে, লাঙল চালাতে শেখে। কিন্তু তারা কেউ ই নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে না। তাদের দুজনেরই স্থায়ী ঠিকানা কিন্তু সেই "কুম্ভীপাক" কলকাতাতেই। এখানে মানুষের রিপুগুলোও উঠে এসেছে। বীণাপানির হাত ধরে এসেছে লোভ, ক্রোধ এসেছে রিয়ার মাধ্যমে, মোহ ছিল হেমাঙ্গের, রামজীবনের ছিল মদের নেশা আর পরশ্রীকাতরতা। কিন্তু এগুলোই তাদের সবটা নয়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অধিকাংশ চরিত্র ই সম্পূর্ণ ভালো নয় বা সম্পূর্ণ খারাপ নয়, মাঝামাঝি পর্যায়েই পড়ে তারা। এই জন্যেই চরিত্রগুলোকে আরও জীবন্ত মনে হয়, কারণ আমরাও কি সেরকমই নই? দিনের শেষে কিছু সাদা, কিছু কালো আর অনেকগুলো ধূসর মানুষের জীবনের খণ্ডাংশ "পার্থিব "। "তোমাকে কে বলে দেবে, একটি প্রস্ফুটিত শিউলি ফুলের সৌন্দর্যে কেন তোমার এত আনন্দ? দূরের নক্ষত্রের দিকে চেয়ে শুয়ে আছে ছাদে, চিৎপাত! তোমার সর্বস্ব হারিয়ে যাচ্ছে অনন্ত নক্ষত্রবীথির রহস্যময়তায় - তখন কে তুমি মনে পড়ে? ওই নক্ষত্ররা কি তোমার সাথে কথা বলে? বলতে চায়? বিজ্ঞান কি ব্যখ্যা করে এক মহৎ কবিতার অন্তলোককে?সুন্দর গানের মধ্যে কোথায় হারিয়ে যায় তোমার লজিক? হে মানুষ, কোন জড়বস্তু থেকে এল চৈতন্যের প্লাবন? ভালোবাসা? মুগ্ধতা? কে ব্যখ্যা করবে তা? বিজ্ঞান তো অন্ধের যষ্টি মাত্র। পথের ঠাহর দেয়, কিন্তু সে নয় তো চোখ!"