লেখক | : মুহম্মদ জাফর ইকবাল |
ক্যাটাগরী | : সাহিত্যিক, শিল্প ও সংগীত ব্যক্তিত্ব |
প্রকাশনী | : প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ১০৯ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
জাফর ইকবালের লেখনীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় বেশ দীর্ঘ হলেও বর্তমান গ্রন্থটিকে বিশেষ শ্রেণীভুক্ত করতে সমালোচকদের বোধহয় একটু ভাবনাক্রান্ত হতে হবে। লেখক তাঁর জীবনের, বিশেষত তরুণ বয়সের নানান টুকরো টুকরো কাহিনীর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন, তাতে বইটি আবশ্যিকভাবেই একটা আত্মজৈবনিক চরিত্র অর্জন করে। লেখক তাঁর জীবনের একটা কালসীমার মধ্যে নিজের মতো করে কিছু ঘটনা, কাহিনী ও অভিজ্ঞতা নির্বাচন করেছেন। সহজ-সাবলীল গদ্যে ওইসব কাহিনীর এমন নির্যাস তিনি পরিবেশেন করেছেন যার মাধ্যমে পাঠক প্রধানত লঘু রসের স্বাদ পেলেও তার আড়াল থেকে খুঁজে পেতে পারেন এক অন্তর্নিহিত জীবনকথা। লেখকের প্রথম গল্প প্রকাশের আনন্দের সমভাগী হয়ে যাই আমরা, আবার জাফর ইকবাল যে ‘বিচ্ছু’ নামে কার্টুন আঁকতেন এবং সমাজ-পরিবর্তনের ডাক দেওয়া কিছু চেনা মানুষের কাছ থেকে সামান্য স্মানী আদায় করতে তাঁকে যে গ্লানির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তা পড়তে গিয়ে, আত্মজীবনীর ধারায় আমরা এক তরুণ লেখককে যেমন, তেমনি তাঁর সমকালকে চিনে নিতে পারি। এই বইয়ের নানান ঘটনা থেকে এক উদ্ধীপ্ত ও বুদ্ধিপটু তরুণকে আবিষ্কার করতে পারি, খেয়ালি সেই তরুণের সৃজনশীলতার পথ হাঁটাও বুঝে নিতে পারি। নানান রসিকতার ছোট ছোট গল্প আছে এই গ্রন্থে, তাতে আমরা মাঝে মাঝে সরস কৌতুকে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠি, কিন্তু আবার চিনে নিতে পারি জীবনসংগ্রামে ব্যাপৃত এক তরুণকে। ঠিক দারিদ্র্য নয় যদি-বা, কিন্তু আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করছে ওই তরুণ হাসিমুখে। আকাশছোঁয়া দামের জন্য যে আসবাবপত্র কিনতে না পেরে, কিনে আনে কাঠ আর কাঠিমিস্ত্রির যন্ত্রপাতি। নিজেই বানিয়ে নেবেন প্রয়োজনীয় আসবাব। স্মৃতি খুঁজে বার করেছেন, এঁকেছেন চমৎকার সব চরিত্র, যাদের মানিয়ে যায় যে কোনো জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনীতে। দেখতে পাই লেখক নিজেই পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে নিহত পিতার লাশ তুলছেন মাটি খুঁড়ে। এই আত্মজীবনীতে বেশিটা জায়গা জুড়ে রয়েছে তাঁর বন্ধু-সহপাঠীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও লেখকের শিক্ষার্থী-জীবনের ইতিকথা আমাদের কাছে শুধু সামাজিক উপাদান হিসেবে ধরা দেয় না, কথকের বর্ণনার ভঙ্গির ভেতর দিয়ে তা অনবদ্য সাহিত্য হয়ে ওঠে।
ভূমিকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার জীবনটা ছিল অসাধারণ। অনেকদিন থেকেই ভাবছি আমি সেই সময়টুকুর কথা লিখে রাখি, শুরু করে আবিষ্কার করলাম কাজটা সহজ নয়। গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা ভুলে বসে আছি অথচ একেবারে তুচ্ছ কোনো ঘটনার খুঁটিনাটি সবকিছু মনে আছে। লিখতে গিয়েও দেখি সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই; জীবনের তুচ্ছ ঘটনাগুলোই ঘুরেফিরে উঠে এসেছে।
তখন মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার সময় কম, চোখে তখন একধরনের রঙিন চশমা। সেই রঙিন চশমার এমনই জাদু যে তুচ্ছ সাধারণ ঘটনাকেই অসাধারণ মনে হয়- আসলে আমার তো কিছু করার নেই!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সিলেট ১২ ডিসেম্বর ২০০৬