লেখক | : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় |
ক্যাটাগরী | : উপন্যাস |
প্রকাশনী | : আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত) |
ভাষা | : বাংলা |
পৃষ্ঠা | : ১৪৬ পাতা |
মুল্য | : ০.০০৳ |
রেটিং |
:
(০)
|
কোন ডাউনলোড রেকর্ড নেই |
এডমন্ড হিলারি আর তেনজিং নোরগে তখন এভারেস্ট বিজয় করলেন। তারও তিন বছর পর ১৯৫৬ সালে দু-দুটো অভিযানে ব্যর্থতার পর তৃতীয় অভিযানে সফলতা পান ভারতীয় পর্বতারোহীগনের একটি দল। তাঁরা প্রত্যেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মী ছিলেন। লক্ষ্য ছিল সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে ওঠা। নয় জনের দলে প্রথম যিনি এভারেস্টে পা রাখার সৌভাগ্য অর্জন করেন তিনি হলেন আভতার (অবতার) সিং শিমা। বাদ বাকি আরো আট জনের মধ্যে অন্যতম হলেন মেজর হরিপাল সিং আলুওয়ালিয়া। এই আলুওয়ালিয়া হিমালয়ের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহনের চার মাস বাদে পাক-ভারত সীমান্ত যুদ্ধে মারাত্মক ইনজুরিতে পড়েন। হুইলচেয়ার হয় নিত্যসঙ্গী।
ইতিহাসের পাতা উল্টাবার কারণ হলো সুনীলের নায়ক কুলদীপ সিং যেন এইচ.পি.এস আলুওয়ালিয়ার কল্প মিশ্রিত প্রতিচ্ছবি। অবশ্য আরো এক কুলদীপ আছে ; কুলদীপ সিং চাঁদপুরী নামে ব্রিগেডিয়ার ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। তাঁকে নিয়ে "বর্ডার" নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে তিনি সুনীলের গল্পের নায়ক নন মোটেও। কেননা লেখক আলুওয়ালিয়ার ছায়াকে নিয়ে গল্প ফেঁদেছেন।অদ্ভুত নামের পর্বতপ্রিয় মানুষটি তাঁর আত্মজীবনী 𝙃𝙞𝙜𝙝𝙚𝙧 𝙩𝙝𝙖𝙣 𝙀𝙫𝙚𝙧𝙚𝙨𝙩 : 𝙈𝙚𝙢𝙤𝙞𝙧𝙨 𝙤𝙛 𝙖 𝙈𝙤𝙪𝙣𝙩𝙖𝙞𝙣𝙚𝙚𝙧( 1973) গ্রন্থে -এভারেস্টের চেয়েও এক অগম দুর্বোধ্য, দুর্যোগময় শিখর অতিক্রম করেছেন; যে শিখর নিজের ভেতরে থাকে, জোর করে জয় করতে হয়।
মানুষের ভেতর যেমন জয়ের আত্মবিশ্বাস থাকে, একই ভাবে অন্ধকারও নেমে আসে কখনো। তবু আগের চেয়ে বহু গুণ জয়ের নেশা মাথায় চাপিয়ে সেই অন্ধকারও জয় করতে হয়।
সুনীলের উপন্যাসটিতে ছিল পর্বতারোহীর চোখে দেখা হিমালয়ের তুষার রাশি। ছিল তাঁদের অভিজ্ঞতা। ছিল পা দিতেই ঝরঝর করে ভেঙে পড়া কঠিন বরফ, কয়েক ফুট গভীর বরফে ঢুকে যাওয়া পা টেনে বের করা, আইস এক্স দিয়ে বরফের কাঠুরিয়া হওয়া, তাঁবু খাটানো, পিচ্ছিল পাথর, তুষার ঝড়, হিম শীতল বৈরীতা, অপার্থিব সৌন্দর্য , বিশালতা ও ভয়াবহতা।
চোখের পানি নিমিষে জমে বরফ হয়ে গালে ঠেসে থাকে, গ্লাভস পরা হাতে খুঁটিয়ে সেই বরফ সরাতে হয়। এমন নিষ্ঠুর সে এভারেস্ট! আরো কত কি!
তবু সাহসী অভিযাত্রীদের চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। কিছু আকর্ষণের কোনো বিকর্ষণ নেই।
আর ছিল ফু দোরজি'র মত শেরপার অকুতোভয় মানসিকতা। 'শেরপা' হলো হিমালয়ের পাদদেশের উপজাতি সম্প্রদায়। যারা আরোহণের সাহায্য না করলে, অভিনব কৌশল গুলো না শিখিয়ে দিলে, দূর-দূরান্তের মহাদেশ হতে পর্বতারোহীরা এসে ব্যর্থ হত চূড়ায় উঠতে।
পাশাপাশি আকাশচুম্বী মাকালু, লোৎসে, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর এভারেস্ট। এভারেস্ট নিয়ে একটা কথা না বললেই নয়। উনত্রিশ হাজার ফিটের এভারেস্ট শৃঙ্গের নামকরণে প্ররোচিত করেন ব্রিটিশ আমলের বাঙালি সার্ভেয়ার রাধানাথ শিকদার। তিনি আবার ''ইয়াং বেঙ্গল'' দলের সদস্য সদস্য ছিলেন। ''ইয়াং বেঙ্গল" ছিল বেঙ্গল রেনেসাঁসের জন্য বিশাল আলোড়ন সৃষ্টিকারী। ওঁদের কথা পরে কখনও বলবো। আগের কথায় ফিরে যাই। সেই রাধানাথ শিকদারই প্রথম হিমালয়ের ১৪ নম্বর চূড়ার (মতান্তরে ১৫ নম্বর) উচ্চতা হিসেব-নিকেশ করে; পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জায়গা বের করে ইতিহাসে নিজের নাম লেখান। অবসরপ্রাপ্ত উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জর্জ এভারেস্টের সম্মানে এর নাম ''এভারেস্ট" রাখার প্র���্তাব হয়। আর অদ্ভুতভাবে এভারেস্ট নামের মধ্যে কোথাও যেন এক বিশালতা লুকিয়ে আছে।
উপন্যাসটিতে সুনীলের নাটকীয় সমাপ্তি চোখে লাগার মত।
কাগুজে পাতায় রয়ে যাওয়া উপন্যাসের অধিবক্তা কুলদীপ সিং-ই হোক আর শিখর জয়ের স্বপ্ন দেখা আজকের কোনো তরুণ-তরুণী হোক ; শিখর থেকে শিখরে ওঠার লড়াই সব মানুষের হৃদয়ে গাঁথা থাক। হোক সেটা লড়াই পর্বতমালার শিখরে বা বাধা-বিপত্তি, আত্মগ্লানি, সীমাবদ্ধতা, হতাশা, কুমতি-সহ যাবতীয় শনি-সম্বলিত বিশাল পর্বত টপকে শিখরে ওঠার- তবু লড়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে লড়াকু মনে প্রতিধ্বনিত হতে থাকুক -